যদুনাথ মজুমদার (২৩ অক্টোবর ১৮৫৯ – ২৪ অক্টোবর ১৯৩২) একজন বাঙালি সম্পাদক, আইনজীবী ও সাহিত্যিক ছিলেন।
প্রথম জীবন
যদুনাথ মজুমদার ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত লোহাগড়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রসন্নকুমার মজুমদার যশোরের দেওয়ানি আদালতে কর্মরত ছিলেন। যদুনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন ও শিক্ষাশেষে কিছুকাল শিক্ষকতার কাজ করেন।[১]
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে যদুনাথ মজুমদার ও যোগেন্দ্রনাথ স্মার্তশিরোমণি যৌথভাবে দ্য ইউনাইটেড ইণ্ডিয়া নামক একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। এই সময় তিনি দ্য স্টেটসম্যান, হিন্দু পেট্রিয়ট ও অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন। কিছু সময় পরে তিনি শিক্ষকতার কাজ ত্যাগ করে লাহোর শহরে ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদনার কাজে যোগ দেন। এই সময় নেপালের মন্ত্রী রণদীপ সিং জঙ্গবাহাদুর তাকে নেপালের রাজপ্রাসাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ করেন কিন্তু এই সময় নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তিনি পুনরায় লাহোরে ফিরে এসে ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর কাশ্মীরের তৎকালীন মন্ত্রী নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তিনি কাশ্মীর সরকারের রাজস্ব সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি বি.এল পরীক্ষা প্রথম বিভাগে পাশ করে আইনে স্নাতক হন।[১]
সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড
আইনে স্নাতক হওয়ার পর যদুনাথ কাশ্মীর থেকে যশোহরে ফিরে এসে ওকালতি শুরু করেন। এই সময় তিনি নীলকর ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে ক্লিষ্ট কৃষকদের পক্ষ অবলম্বন করে মামলা লড়তেন ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাদের দুর্দশা সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখতেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রাডলী নামক এক নীলকর ব্যবসায়ীর অত্যাচারের কাহিনী ও কৃষকদের কষ্টের কাহিনী উত্থাপন করলে ধীরে ধীরে নীলকরদের অত্যাচার কমে যায়।[১]
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই সেপ্টেম্বর হতে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে নভেম্বর যদুনাথ যশোর জেলা বোর্ড ও যশোর পুরসভার সভাপতি ছিলেন। এই সময় যশোহর টাউন হল এবং বিশুদ্ধ জল সরবরাহের জন্য জলকল স্থাপিত হয়।[১] এই সময় তিনি ঐ অঞ্চলে বেশ কিছু প্রাথমিক ও উচ্চ বিস্যালয় স্থাপন করেন। ইতিপূর্বে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যশোহরে সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন নামক একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তার লোহাগড়ার বাসস্থানে লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও যশোহরের বাসস্থানে আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এছাড়া তার পৃষ্ঠপোষকতায় লোহাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, যশোহরের সুফলাকাটী হাই স্কুল, রাজঘাট হাই স্কুল, বরিশালের কদমতলা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। যদুনাথের প্রচেষ্টায় বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের নবম অধিবেশন যশোরে অনুষ্ঠিত হয়।[২]
সম্পাদনা ও সাহিত্য কর্ম
যদুনাথ সম্মিলনী, বৈশ্যবারুজীবী ও হিন্দু নামক বাংলা পত্রিকা ও ব্রহ্মচারী নামক একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেন। আমিত্বের প্রসার, ব্রহ্মসূত্র, পরিব্রাজক সূক্তমালা, সাংখ্যকারিকা, শান্ডিল্য সূত্র, নরগাথা, শ্রেয় ও প্রেয়, উপবাস, পল্লী স্বাস্থ্য ইত্যাদি বাংলা গ্রন্থ ও শান্ডিল্যসূত্রের ইংরেজি টীকা তার উল্লেখযোগ্য রচনা।[১]
সম্মাননা
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ রাজের পক্ষ থেকে যদুনাথকে রায়বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়। যদুনাথের পাণ্ডিত্যের কারণে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে বর্ধমান রাজ বিজয়চন্দ্ মহ্তাবের সভাপতিত্বে তাকে ‘বেদান্ত বাচস্পতি’ উপাধি প্রদান করা হয়। অসামান্য পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বিদ্যাবারিধি’ উপাধিও লাভ করেন।[১][২]
——————————————————————-R—–I——-P——–O——-N—————————————————-
যদুনাথ মজুমদারের স্মরণ উৎসব
২৩ অক্টোবর,২০২২খ্রি.
যশোর: যশোর ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী স্মরণ উৎসব শুরু হয়েছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের আবক্ষমূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে এ উৎসব শুরু হয়।
এরপর যশোর ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শিশুদের সংগীত পরিবেশন ও ১৬৪টি মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। সন্ধ্যায় রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের জীবনী পাঠ ও শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন যশোর ইনস্টিটিউটের পরিচালনা পর্ষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কলামিস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম রন্টু, যশোর ইনস্টিটিউটের নাট্যকলা সংসদের সম্পাদক চুন্নু সিদ্দিকী, পাবলিক লাইব্রেরি বিভাগের সম্পাদক এস নিয়াজ মোহাম্মদ, সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিক প্রণব দাস।
প্রসঙ্গত, রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার ১৮৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন, একাধারে একজন লেখক, সাংবাদিক এবং একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক ও নেতা। ১৯০৪ এর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত যশোর জেলা বোর্ড এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি অসংখ্য প্রাথমিক এবং উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে তিনি মেয়েদের বেশ কিছু স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার ছিলেন যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির প্রাণপুরুষ। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ রাজের পক্ষ থেকে যদুনাথকে রায়বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।
যশোর ইনস্টিটিউটের আয়োজনে রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের ১৬৩তম জন্ম ও ৯০তম মৃত্যু দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী এ স্মরণ উৎসব শেষ হবে ৩০ অক্টোবর। এতে থাকবে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ লাঠিখেলা, মোরগ লড়াই, কবিতা পাঠ ও আবৃতি এবং সংবর্ধনা।
ivq evnv`yi h`ybv_ gRyg`vi ¯§iY Drme-2022
UvDb K¬ve- ‡Ljv cÖ`k©bx
ZvwiL : 14/11/2022
µg. |
ZvwiL |
‡Ljv |
UvKv |
‡gvevBj |
¯^vÿi |
1 |
28-10-2022 |
jvwV †Ljv |
30,000.00 |
|
|
2 |
29-10-2022 |
‡gviM jovB |
15,300.00 |
|
|
3 |
30-10-2022 |
nv-Wz-Wz |
15,000.00 |
|
v&& |
|
|
‡gvU = |
60,300.00 |
|
|
K_vq : lvU nvRvi wZbkZ UvKv gvÎ|
ivq evnv`yi h`ybv_ gRyg`vi ¯§iY Drme-22
gwnjv Af¨šÍixb µxov cÖwZ‡hvMxZv
wm.Avi.wm wefvM
ZvwiL : 17/11/2022wLª.
µ. bs. |
weeiY |
UvKvi cwigvb |
‡gvU UvKv |
01 |
e¨vbvi |
1,300.00 |
1,300.00 |
02 |
mvDÛ jvBU |
2,100.00 |
2,100.00 |
03 |
‡W‡Kv‡iUi |
3,700.00 |
3,700.00 |
04 |
mvR-m¾v |
2,200.00 |
2,200.00 |
05 |
dzj |
750.00 |
750.00 |
06 |
cyi®‹vi |
56,500.00 |
56,500.00 |
07 |
Avc¨vqb |
3,500.00 |
3,500.00 |
08 |
hvZvqvZ |
4,000.00 |
4,000.00 |
|
‡gvU UvKv = |
74,050.00 |
74,050.00 |
K_vq : PzqvËi nvRvi cÂvk UvKv gvÎ|
ev‡RU wQj -89,300.00
LiP n‡q‡Q -74,050.00 .
nv‡Z bM` -15,250.00
ivq evnv`yi h`ybv_ gRyg`vi ¯§iY Drme-22
UvDb-K¬v‡ei Av‡qvR‡b ‡Ljv
ZvwiL : 17/11/2022wLª.
µ. bs. |
weeiY |
UvKvi cwigvb |
‡gvU UvKv |
01 |
e¨vbvi 3w`b 28,29,30 |
2,775.00 |
2,775.00 |
02 |
gvV ˆZwi I mvR-m¾v |
14,119.00 |
14,119.00 |
03 |
‡W‡Kv‡iUi 28,29,30 / 300 †Pqvi |
14,500.00 |
14,500.00 |
04 |
jvwV †Ljv |
30,000.00 |
30,000.00 |
05 |
‡gviM jovB |
15,300.00 |
15,300.00 |
06 |
nv-Wz-Wz |
15,000.00 |
15,000.00 |
07 |
‡µ÷ |
4,100.00 |
4,100.00 |
08 |
cÖPvi 3w`b (BwRevBK-2wU/gvBK †mU) |
5,800.00 |
5,800.00 |
09 |
Avc¨vqb |
3,500.00 |
3,500.00 |
10 |
‡Ljvi †MwÄ |
1,800.00 |
1,800.00 |
|
‡gvU UvKv = |
106,894.00 |
106,894.00 |
K_vq : GK jÿ Qq nvRvi AvUkZ PzivbeŸBZxb µqX UvKv gvÎ|
ev‡RU wQj -1,34,000.00
LiP n‡q‡Q- 106,894.00
nv‡Z bM` -27,106.00
ivq evnv`yi h`ybv_ gRyg`vi ¯§iY Drme-22
Rb¥ Drme
ZvwiL -23/10/2022
µ. bs. |
weeiY |
UvKvi cwigvb |
‡gvU UvKv |
01 |
e¨vbvi |
925.00 |
925.00 |
02 |
‡W‡Kv‡iUi |
1,800.00 |
1,800.00 |
03 |
dzj |
3,400.00 |
3,400.00 |
04 |
PK‡jU |
470.00 |
470.00 |
05 |
wkíx |
1,000.00 |
1,000.00 |
06 |
cvBc Avbv-‡bIqv |
500.00 |
500.00 |
|
‡gvU UvKv = |
8,095.00 |
8,095.00 |
K_vq : AvU nvRvi cPvbeŸB UvKv gvÎ|
ivq evnv`yi h`ybv_ gRyg`vi ¯§iY Drme-22
ZvwiL -23/10/2022
µ. bs. |
weeiY |
UvKvi cwigvb |
‡gvU UvKv |
1. |
DËixq |
8,785.00 |
8,785.00 |
2. |
‡gvg |
600.00 |
600.00 |
3. |
D‡Øvabx †ejyb |
1,800.00 |
1,800.00 |
4. |
e¨vbvi |
2,425.00 |
2,425.00 |
5. |
dzj (Av‡jvPbv, gÂ, fv®‹h©, mvRm¾v 7w`b, AwZ_x 2w`b, †L‡jvqvi msea©bv 25 Rb) |
9,350.00 |
9,350.00 |
6. |
fv¯‹h© jvBU (23,24,28,29,30) |
2,500.00 |
2,500.00 |
7. |
‡µ÷ (AwZ_x BwÛqv) |
18,500.00 |
18,500.00 |
8. |
PK‡jU |
3,120.00 |
3,120.00 |
9. |
Avc¨vqb |
1,800.00 |
1,800.00 |
10. |
‡ccvi µq |
56.00 |
56.00 |
11. |
mvDÛ jvBU |
14,000.00 |
14,000.00 |
12. |
w÷j Qwe I wfwWI dz‡UR |
4,000.00 |
4,000.00 |
13. |
mvsevw`K Avc¨vqb (7) mvZ w`b 20-30 ch©šÍ |
10,500.00 |
10,500.00 |
14. |
g¨v‡mR 2 w`b |
5,650.00 |
5,650.00 |
15. |
Avgš¿Y cÎ |
5,700.00 |
5,700.00 |
16. |
Rxebx |
3,800.00 |
3,800.00 |
17. |
‡KvjKvZv AwZw_ Avc¨vqb |
46,651.00 |
46,651.00 |
18. |
Rb¥ Drme LiP |
8095.00 |
8095.00 |
|
‡gvU UvKv = |
147,332.00 |
147,332.00 |
K_vq : GK jÿ mvZPwjøk nvRvi wZbkZ ewÎk UvKv gvÎ|
আধুনিক যশোরের কারিগর রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার অজানা ইতিহাস। পৃথিবীতে যারা মানব কল্যাণে কাজ করে মৃত্যুর পরেও তারা অবিস্মরণীয় মর্যাদায় বিভূষিত হয়। বিদ্যুৎসাহী, বাগ্মী, পন্ডিত এবং সাহিত্যিক রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার তাদেরই মত অবিস্মরণীয় মর্যাদার অধিকারী।
রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার ১৮৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানায় জন্মেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন লেখক, সাংবাদিক এবং একজন স্বনামধন্য সমাজসেবক ও নেতা।
শিক্ষা ও পেশাগত জীবন:
শিক্ষাজীবনে যদুনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন
১৮৮৩ সালে যদুনাথ ও ড. যগেন্দ্রনাথ একযোগে ‘দি ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ নামে একটি ইংরেজী সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সম্পাদনা করেন। নিজের পত্রিকায় লেখার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত ‘স্টেটসম্যান’, ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ ও ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় অনেক প্রবন্ধ লিখতেন।
এরপর কিছুদিনের জন্য শিক্ষকতা পরিত্যাগ করে ‘ট্রিবিউন’ পত্রিকার সম্পাদক হয়ে লাহোরে চলে যান।
দৈনিক ‘ট্রিবিউন’ সম্পাদক থাকা অবস্থায় নেপালের মন্ত্রী স্যার মহারাজা রণদীপ শিং জঙ্গী বাহাদুর তাঁকে নেপালের রাজপ্রাসাদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন।
কিন্তু রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে তিনি নেপাল ত্যাগ করেন এবং দৈনিক ‘ট্রিবিউন’ পত্রিকার সম্পাদক পদে পুনর্বহাল হন। তারপর রাজ্যমন্ত্রী নিলাম্বর মুখার্জীর আমন্ত্রণে তিনি কাশ্মীর সরকারের রাজস্ব সচিবের পদ গ্রহণ করেন।
কাশ্মীরে থাকা অবস্থায় তিনি আইনে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে কাশ্মীর সরকারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে যশোরে এসে ওকালতি শুরু করেন
সেবামূলক কর্মকান্ড :
রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার কাশ্মীর সরকারের চাকরি ছেড়ে যশোরে আসার পর তিনি
যশোরের একজন সুযোগ্য জননেতা এবং বিজ্ঞ উকিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি ইউরোপীয় নীল ব্যবসায়ীদের দ্বারা নির্যাতিত চাষীদের হয়ে মামলায় লড়তেন।
এছাড়াও তিনি এইসব নির্যাতনের চিত্র পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে তুলে ধরতেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাতেন।
১৮৮৯-৯০ খৃষ্টাব্দে যশোরে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে জনগণ অতিষ্ট হয়ে উঠলে তিনি অত্যাচারিত প্রজাগণের পক্ষ অবলম্বন করে ব্রাডলী সাহেবের দ্বারা নীলকরদের অত্যাচারের কাহিনী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপন করান এবং পার্লামেন্ট ভারত সরকারের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। তারপর থেকে নীলকরদের অত্যাচার প্রশমিত হয় এবং এতদঞ্চলে নীলচাষ বন্ধ হয়ে যায়।
যদুনাথ যশোরে ওকালতি ব্যবসা শুরু করার পর জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন বিষয় আলোচনার জন্য একটি ফোরাম গঠন করার উদ্দেশ্যে ‘সম্মিলনী’ নামে একটি পত্রিকা
প্রকাশ করেন। দেশের যেকোন সমস্যার সমাধানার্থে নিজের পত্রিকা ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় চিন্তামূলক প্রবন্ধ লিখতেন।
তিনিই সর্বপ্রথম তৎকালীন ভারতের জেলা বোর্ডে বেসরকারী চেয়ারম্যান নিয়োগ সন্বন্ধে ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকায় সমালোচনা করেন।
যদুনাথ মজুমদার ১৯০৪ এর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত যশোর জেলা বোর্ড এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন।
ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মত ঘাতক ব্যধির আক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য ‘পল্লী স্বাস্থ্য’ নামক একখানি ক্ষুদ্র পুস্তক প্রকাশ করে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক শিক্ষা প্রদান করেন।
এসবের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি যশোর শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেন এবং টাউনহল নির্মাণ করেন।
তিনি নিজে যেমন একজন বিদ্যান ব্যাক্তি ছিলেন তেমনি বিদ্যোৎসাহী ব্যাক্তিও ছিলেন। যশোর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি অসংখ্য প্রাথমিক এবং উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেশবাসীর বিদ্যার্জনের পথ সুগম করে গিয়েছেন।
নারি শিক্ষা সম্প্রসারণে তিনি বেশ কিছু মেয়েদের স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৯ খৃষ্টাব্দে তিনি যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন নামক উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তাঁর লোহাগড়ার বাড়ীতে লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় (মডেল কলেজ) এবং তাঁর যশোর শহরস্থ বাড়ীতে আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (মডেল গার্লস স্কুল) স্থাপিত হয়েছে।
তাঁর প্রচেষ্টায় লোহাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, যশোরের সুফলাকাটী হাই স্কুল, রাজঘাট হাই স্কুল, বরিশালের কদমতলা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যশোর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি কিছু প্রাইমারী, এস. ই. হাইস্কুল ও কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করতে সাহায্য করেন।
তারই প্রচেষ্টায় যশোরে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের নবম অধিবেশন সংঘটিত হয়। ১৯০২ সালে ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
সাহিত্যকর্ম :
রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার একজন শক্তিশালী সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, স্বাস্থ্যতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।
তাঁর রচিত বিখ্যাত কিছু গ্রন্থাবলী ‘পরিব্রাজক’, ‘শ্রেয়া এবং প্রিয়া’, ‘উপবাস’ এবং ’পল্লী স্বাস্থ্য’ পান্ডিত্য মহলে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলির মধ্যে আছে – ‘আমিত্বের প্রসার’, ‘ব্রহ্মসুত্র’, ‘পরিব্রাজক যুক্তমালা’, ‘সাংখ্যকারিকা’, ‘শান্তিল্যসুত্র’, ‘নরগাথা’, ‘শ্রেয় ও প্রেয়’ ইত্যাদি।
তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ইংরেজীতেও অনুবাদ করেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ব্রহ্মসুত্র’। তাঁর ইংরেজীতে অনূদিত সান্ধিল্য সুত্র পশ্চিমা পন্ডিতরাও সাগ্রহে গ্রহণ করেছেন।
হিন্দুত্ববাদের মৌলিক বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য তিনি ‘হিন্দু পত্রিকা’ প্রকাশ করেন এবং পত্রিকাটিতে হিন্দু শাস্ত্রের মর্ম ব্যাখ্যা করে শাস্ত্রের প্রতি শিক্ষিত হিন্দু সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের ধর্মগ্রন্থের বিষয়ে আগ্রহী করে তোলেন।
তিনি ইংরেজী ভাষায় ‘ব্রহ্মচারী’ রচনা করেন এবং ‘বৈশ্ববারোজীবি’ নামে আরো একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ‘হিন্দু পত্রিকা’র ন্যায় তিনি ইংরেজীতে ‘ব্রহ্মচারী’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ‘হিন্দু পত্রিকা’ ও ‘ব্রহ্মচারী পত্রিকা’র জন্য বিভিন্ন ধর্মপ্রচারক সন্নাসীগণ ও পাশ্চত্য বিদ্যায় সুপন্ডিত ব্যাক্তিবর্গ যদুনাথের প্রশংসা করেছিল।
রায় বাহাদুর কালীপ্রসন্ন ঘোষ ‘হিন্দু পত্রিকা’ সন্বন্ধে লিখেছিল, ‘হিন্দু পত্রিকা ঋষিজ্ঞানের রত্ন এখনও রত্নের বণিক না আছে এমন নয়, যখন তাহারা ইহার পরিচয় পাইবে, তখন হিন্দু পত্রিকার চারিপার্শ্বে সাধু মহাজনের হাট বসিবে।
ভগবানের নিকট প্রার্থনা করি আপনি তাহার কৃপায় এই পুরাতন রত্নের বাণিজ্যে পূর্ণ মনোরথ হইয়া স্বদেশের সুখ উজ্জ্বল করুন।’ তিনি ‘বৈশ্যবারুজীবী’ নামক আরো একখানি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন।
রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি সংস্কৃত, হিন্দী,উর্দু, গুর্খা, গুরুমুখী, উড়িয়া প্রভৃতি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।
তিনি বেদবেদান্তাদিতে একজন সুপন্ডিত ছিলেন। তাঁর শাস্ত্রজ্ঞানের পরিচয় পেয়ে তৎকালীন সময়কার বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যার পন্ডিতমন্ডলী কলকাতার সংস্কৃত কলেজে বর্দ্ধমানাধিপতির সভাপতিত্বে ‘বিদান্ত বাসাসপতি’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
তাঁর অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য তাঁকে ‘বিদ্যাবারিধী’ পদকও দেওয়া হয়। পন্ডিতগণ তাঁর বেদান্তাদি শাস্ত্রে প্রচুর পান্ডিত্য বিমল চরিত্র প্রভৃতি স্বদেশানুরাগ ও মধুর বাস্মীতায় প্রীত হয়ে তাঁকে এ উপাধি প্রদান করা হয়।
উপাধি পত্রে লিখিত আছে-
বেদান্তাদিষৃতে নিরীক্ষ্য মতিমন্ নৈপুণ্য সতুজ্জ্বলম্
চারিত্রং বিমলঞ্চ সজ্জনসুহৃদ্ দেশানুরাগং পরম্
ঋগবাগ্মিত্ব মনাকুলঞ্চ মধুরংতে দীয়তে সামপ্রতং
প্রীত্যাস্মাভিরু পাধিরেষ মুর্দি তৈর্ব্বেদান্ত বাচস্পতিঃ।
পরলোক গমন: এই কর্মবীর ১৯৩২ সালের ২৪শে অক্টোবর ৭৪ বছর বয়সে মাগুরা জেলার দয়ালপুরে মৃত্যুবরণ করেন।