JASHORE INSTITUTE-RIPON

যশোর ইনস্টিটিউট,যশোর

Jashore Institute, Jashore

বিজ্ঞপ্তি :-

যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, ক্রীড়া বিভাগ, নাট্যকলা সংসদ, শিশু চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে সদস্য ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে শত বছরের দ্বারপ্রান্তে উপনীত পুরাতন অন্যতমশ্রেষ্ঠ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান যশাের ইনস্টিটিউট। তবে সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অনিবার্য ভাবে যশাের ইনস্টিটিউট একটি গণােন্নয়নমূলক সংস্থা। যেখানে বই প্রেমী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রেমীদের আত্মােন্নয়নে মঙ্গলগীত হয়ে থাকে। তকালীন জমিদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের বদান্যতায় যশােরের পাঠাগার ভক্ত, নাট্যর প্রিয় এবং ক্রীড়ানুরাগীমহলের উৎসাহে ১৯২৮ সালে রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার উদ্যোগ নেন পাবলিক লাইব্রেরি, নিউ আর্য থিয়েটার আর টাউন ক্লাবকে একত্র করে যশাের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার। যশাের ইনস্টিটিউটের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনিই। তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন নড়াইলের জমিদার। যশােরের বিশিষ্ট আইনজীবী যশাের পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং যশাের জেলা বাের্ডের মনােনীত সভাপতি। আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত এক উদার ব্যক্তিত্ব। যশাের ইনস্টিটিউট তাঁরই ভূসম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

১৯২৭ সালে যশাের জেলার লােহাগড়ার মজুমদার পরিবারের কৃতি সন্তান বহুভাষাবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ধর্ম শাস্ত্রবিদ এবং আইনজীবী রায় বাহাদুর যদুনাথ। মজুমদার উদ্যোগী হয়ে পাবলিক লাইব্রেরি, নিউ আর্য থিয়েটার আর টাউন ক্লাব মিলে মিশে একটা পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিককেন্দ্র গড়ে তােলেন এই উদ্যোগের ফলে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশাের ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটি বহু চড়াই উত্রাই পেরিয়ে অনেকগুলাে জনকল্যাণ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরির পাশাপাশি টাউন হল বা আলমগীর সিদ্দিকী হল, টাউন ক্লাব, মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান (প্রাক্তন টাউন হল ময়দান) স্বাধীনতা মঞ্চ বা উন্মুক্ত মঞ্চ, • রওশন আলী সংস্কৃতি মঞ্চ, নিউ আর্য থিয়েটার বা ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ, বি সরকার মেমােরিয়াল হল তসবীর মহল, বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হল, বই ব্যাংক বা আঞ্চলিক কেন্দ্রীয় বই ব্যাংক ভবন। চিত্ত বিনােদন কেন্দ্র সি আর সি শিশু ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যতম।

১৯২৮ সালে যশাের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯০৯ সালে স্থাপিত হয় টাউন হল, ১৯১৯ সালে টাউন ক্লাব ও নিউ আর্য থিয়েটার স্থাপিত হয়। নিউ আর্য থিয়েটারের জন্য ১৯২১ সালে নির্মিত হয় বি সরকার মেমেরিয়াল হল মহল। বর্তমানে যশাের ইনস্টিটিউটে মূল সংগঠন ছাড়াও তিনটি বিভাগ চালু আছে। যেমন-যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, যশাের ইনস্টিটিউট ক্রীড়া বিভাগ ও যশাের ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ মধ্যে ক্রীড়া বিভাগের সাথে যুক্ত আছে টাউন ক্লাব ও শিশু চিত্ত বিনােদনকেন্দ্র বা সি আর সি বিভাগ যশাের ইনস্টিটিউট সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের ফলে সেখানে আর যশাের ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। তবে যশাের ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ও জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। যশাের ইনস্টিটিউটের দলিলপত্র থেকে জানা যায় প্রথম দিকে ইনস্টিটিউটের নির্বাচন প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪৩ সালে কোনাে নির্বাচন ছাড়াই কমিটির দায়িত্ব পালন করে। ১৯৪৪ সাল থেকে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান চলে মনােনীত কমিটি দিয়ে।

বর্তমানে ইনস্টিটিউটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় প্রতি তিন বছর পর পর। দাতা জীবন এবং সাধারণ সদস্যগণ ভােট দিয়ে ২০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এই নির্বাচিত নির্বাহীগণ ইনস্টিটিউটের তিনজন সহসভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, দুজন সহকারী সাধারণ সম্পাদক, একজন লাইব্রেরি সম্পাদক, একজন ক্রীড়া সম্পাদক, একজন টাউন ক্লাব সম্পাদক, একজন নাট্যকলা সম্পাদক ও একজন শিশু চিত্ত বিনােদন সম্পাদক নির্বাচন করেন। বর্তমানে যশাের ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চলে। পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক, যশাের ইনস্টিটিউটের সভাপতি। বিভিন্ন বিভাগে আবার উপকমিটি গঠিত হয় এবং এই উপকমিটিই সংশ্লিষ্ট বিভাগ পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকেন। প্রতিবছর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রত্যেক বিভাগসহ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ও নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালােচনা করা হয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম লগ্নে প্রধানত ইংরেজ সাহেব আর কুঠিয়ালরা ইনস্টিটিউট এবং লাইব্রেরি ব্যবহার করার সুযােগ পেত। প্রায় অর্ধশতক পরে প্রাধান্য লাভ করে শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়। মুসলমানরা পাকিস্থান অর্জনের পূর্বে সামান্যই এ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করার সুযােগ পেত। যশাের ইনস্টিটিউটের সদস্য সংখ্যা ৩৮৭০ জন তন্মধ্যে ৭১ জন দাতা সদস্য ৭৪৯ জন আজীবন সদস্য ২৭১ জন লাইব্রেরি বিভাগীয় সদস্য ১৪০ জন ক্রীড়া বিভাগীয় সদস্য, নাট্যকলা বিভাগে ৭৫ জন এবং চাঁদা মুক্ত শিশু বিভাগে ১৩ জন।

১৯৭০ সালে স্থাপিত যশােরের অন্যতম আধুনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশাের ইনস্টিটিউট প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাঝারি ধরণের সিনেমা হল তসবির মহল। বি সরকার মেমােরিয়াল ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ অবিভক্ত বাংলার প্রচীনতম ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চের একটি। ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ অঙ্গনে ভূপতি মঞ্চ নামে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ আছে। শত বছরের পুরনাে ব্রিটিশ স্থাপত্য টাউন হল স্বমহিমায় বিদ্যমান। আর সব কিছু ছাপিয়ে বিশ্বনাথ লাইব্রেরি হল ও কেন্দ্রীয় বইব্যাংক ভবন দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্য হিসেবে দণ্ডায়মান। যশাের ইনস্টিটিউটের সম্পদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য এম এম আলী রােডে ৩৩ টি দোকানুসহ ইনস্টিটিউট মার্কেট, আর এন রােডে ১৭ টি দোকানসহ উন্মেষ মার্কেট। বকুল তলায় ১টি দোকান ঘর ও ইনস্টিটিউ পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান।

 

যশাের ইনস্টিটিউট মূলত মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার সুতিকাগার হিসেবে গােটা দেশের জ্ঞান ও সৃজনশীল সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও নাট্যচর্চায় উল্লেখযােগ্য অবদান রেখে চলেছে। রওশন আলী সংস্কৃতি মঞ্চতাে প্রায় সারাবছর প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানাদিতে মুখরিত থাকে। তবে সেক্ষেত্রে লাইব্রেরির সদস্য ও পাঠকবৃন্দ নিরবিচ্ছিন্ন পঠন পাঠনে মারাত্মকভাবে ব্যহত হন, ফলে তারা বিরক্ত হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ মুন্সি মেহেরুউল্লাহ ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে খােলা স্বাধীনতা মঞ্চ উন্মুক্ত মঞ্চ সংস্কারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। হয়তাে নিকট আগামীতে এ সমস্যার সমাধান হবে। বর্তমান পরিচালনা। পর্ষদের মেয়াদকাল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ রবিউল আলম বয়সে প্রবীণ কিন্তু কর্মে উদ্দীপ্ত একজন মানুষ, তিনি ইনস্টিটিউটের চলমান কার্যক্রমকে সচল রাখতে সর্বদা বদ্ধ পরিকর। ষাটের দশক থেকে এ পর্যন্ত কার্যক্রমকে সচল রাখতে সর্বদা সচেষ্ট। তবে যশাের ইনস্টিটিউটের সার্বিক ও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন তখনই সম্ভব হবে যখন সমস্ত নির্বাহী কমিটি এবং যশােরের সমাজ হিতৈষীরা সমবেতভাবে দল মত নির্বিশেষে এর উন্নয়নে একযােগে কাজ করবেন।

১৯২৮ সাল থেকে যশাের ইনস্টিটিউট আর যশাের পাবলিক লাইব্রেরি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার কাল। কিন্তু নানাবিধ কারণে সকল তথ্য এখন আর পাবার উপায় নেই। তবু যতটুকু তথ্য পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে ১৯২৮ সাল থেকে যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদকগণের সাল ওয়ারি ক্ষমতা আরােহন ও কার্যকালের তালিকা এবং বিভিন্ন বিভাগের সম্পাদকগণের কার্যকালের তালিকা বিভাগওয়ারি সংযুক্ত করার প্রয়াসটি যশাের ইনস্টিটিউটের ইতিহাসের অংশ হিসেবে সন্নিবেশিত করা হল।