JASHORE INSTITUTE-RIPON

যশোর ইনস্টিটিউট,যশোর

Jashore Institute, Jashore

বিজ্ঞপ্তি :-

যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, ক্রীড়া বিভাগ, নাট্যকলা সংসদ, শিশু চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে সদস্য ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে।

নাট্যকলা সংসদ

বৃহত্তর যশাের জেলার তদান্তিন নড়াইল মহাকুমার লােহাগড়ার বিখ্যাত মজুমদার পরিবারের কৃতি সন্তান রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের উদ্যোগে টাউন ক্লাবের সাথে সাথে নিউ আর্য থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৯ সালে। পরে ১৯২৮ সালে নাট্যকলা সংসদ নামে যশাের ইনস্টিটিউটের সাথে একিভূত হয়। উপমহাদেশের নাট্য আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে এতদঞ্চলে প্রায় শত বর্ষের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে প্রতিষ্ঠান। নিউ আর্য থিয়েটারের সাথে ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ নাটকের জন্য ১৯২১ সালে নির্মিত হয়। বি সরকার (বিশ্বেস্বর সরকার কলকাতার বিখ্যাত গিনি হাউসের মালিক যাদের আদি নিবাস যশােরের চৌগাছায়) মেমােরিয়াল হল। এটি এখন তসবির মহল সিনেমা হল নামে পরিচিত। ঘুর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চটি শতবর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে আজো অতীত ঐতিহ্যকে স্বগৌরবে লালন করে চলেছে। এক সময় কলকাতার নামি-দামি শিল্পদের পদচারণায় মুখর থাকতাে নাট্যকলা সংসদের অঙ্গন। বর্তমানে নাটক মঞ্চায়ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা নতুন নতুন শিল্পী সৃষ্টিতে যশাের ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ আগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। অতীতে অনেক গুণি নাট্যশিল্পী নাট্যাভিনয়, ও নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুনাম অর্জন করে যশাের তথা দেশের মুখােজ্বল করতে সমর্থ হয়েছে। ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর নাট্যকলা বিভাগে ব্যাপক লুটপাট ও ভাংচুর হয়। তখন ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ মঞ্চটি ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলে এর কার্যক্রম স্থিমিত ও বিনষ্ট হয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালে অ্যাডভােকেট জনাব রওশন আলী যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এলে তিনি মঞ্চটির সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন শ্রীভূপতি মােহন চন্দ্র নিউ আর্য থিয়েটার পরিচালনা করতেন এবং নাট্যকথা সংসদের সাথে সংযুক্ত থাকতেন। কাপুড়িয়াপট্টির বাণী জুয়েলারির সােনার দোকানের পিছনে জুয়েলারি সমিতি সংশ্লিষ্ট কিছু শিল্পমনা মানুষ। এবং শহরের স্বনামধন্য কিছু নাট্যকর্মী যেমন ওহাব খান, নলিনী রায় (শিল্প ভান্ডারের মালিক), পঞ্চানন অধিকারী, অধীর কর্মকার, তারাপদ, পূলীনদে, মাহমুদুল হক, প্রফুল্ল মান্না এবং কেন্টসহ আরাে অনেকে এখানে আসতেন এবং দর্শনীয়র বিনিময়ে নাটক মঞ্চায়ন করতেন। তখন যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভােকেট রওশন আলী ভূপতি বাবুকে একটি নাটক রচনার আহবান জানালে ভূপতি বাবু ‘পারগেটির’ নামের একখানি হাসির নাটক রচনা করেন। নতুন কলেবরে নাটকটি যশােরের তৎকালীন গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের উপস্থিতিতে বি সরকার ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চে মঞ্চায়ন হয়। অতপর পাকিস্থানের ক্রান্তিলগ্নে ১৯৭০ এর দশকের শেষ ভাগে মাহমুদুল হক রচিত একখানা স্বদেশী নাটক ‘মা’ যশাের ইনস্টিটিউট নাট্যকলা মঞ্চে মঞ্চায়ন হয়। তখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল দিন অতিবাহিত করেছে। সেই অগ্নিঝরা দিনে এমন একটি সাহসী নাটকে অভিনয়ের জন্য অমল সেন, ভূপতি মােহন চন্দ্র, মাহমুদুল হক, আলী আকবর, অ্যাডভােকেট এস. এম জাফর সাদিকসহ অনেকের বিরুদ্ধে সরকারি গােয়েন্দা বাহিনী লেলিয়ে দেয়া হয়, ফলে তখন তারা পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। অতীত ইতিহাস পর্যালােচনায় দেখা যায়, ঐতিহ্যবাহী যশাের ইনস্টিটিউটের বি সরকার ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চের তকালীন ভারত বর্ষের অনেক দিকপাল অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় করে তাদের উজ্জল অভিনয় ক্ষমতার গুণে মানুষকে মুগ্ধ করে গেছেন। সে সময়ের উল্লেখযােগ্য অভিনেতা কয়েকজন: ধিরাজ ভট্টাচার্য, মনােজ বসু, ছবি বিশ্বাস, বনানী সেন সহ অনেকে। যশােরের বিশিষ্ট কবি আজীজুল হক এর রচনায় এবং পরিচালনায় নজরুলের ছায়ানাট্য ‘অগ্নিবীণা’ মঞ্চস্থ হলে ১৯৬৭ সালে আলােড়ন সৃষ্টি হয়। তখন নজরুলের ভূমিকায় অভিনয় করেন অমল সেন। সংগীতে অধীর কর্মকার ও পঞ্চানন অধিকারী সংযুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর নাটক। বিভাগ নাট্য চর্চা এবং অন্যান্য শাখায় গতিশীলতা ফিরে পায়। এ সময় ১৯৭৫ সালে বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী আশরাফ হােসেন সংগীত পরিচালনায় কালীদাসের ‘শকুনতলা’ নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয়। এক সময় গুণি নাট্য শিল্পী আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন নাটাঙ্গন মুখােরিত রেখেছিলেন। সৈয়দ সিদ্দিক হােসেন শেখ রবিউল আলম, আলী আকবর, অ্যাডভােকেট জাফর সাদিক, একরাম-উদ দৌলা, মহিউদ্দিন লালু, অ্যাডভােকেটক চুন্ন সিদ্দিকী, ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু, প্রমুখ গুণি শিল্পী ও পৃষ্ঠপােষক নাট্যকলার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। ভূপতি বাবুর দীর্ঘ নাটক জীবনের অবদান স্বরূপ তার পরিবার বর্গের পৃষ্ঠপােষকতায় ২০০০ সালে নাট্যকলা সংসদ অঙ্গনে একটি উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ স্থপিত হয়। যেটি ভূপতি মঞ্চ নামে পরিচিত। তকালীন যশাের ইনস্টিটিউটের সভাপতি জেলা প্রশাসক জনাব মুহাম্মদ আমিনুর রসূল ও যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক জনাব খালেদুর রহমান টিটো ১৩ মার্চ ২০০০ তারিখে উদ্বোধন করেন। যশাের ইনস্টিটিউট নাট্য কলা সংসদের ২০১৫-২০১৮ মেয়াদের বিভাগীয় উপ-কমিটির কার্যকালে নাট্যকলা বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন জনাব আব্দুর রহমান কিনা। একজন বিশিষ্ট টিভি চলচ্চিত্র ও মঞ্চ নাটকের সফল অভিনেতা নাট্য পরিবারের সন্তান তরুণ উদ্যোমী এ শিল্পী নাট্যকলার উন্নয়নে নতুন নতুন নাটক মঞ্চায়ন প্রশিক্ষণ ও শিল্পী পৃষ্ঠপােষকতায় অত্যন্ত সফলতার সাথে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে নাট্য মঞ্চায়নের রীতিনীতি ও ধারার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে নাট্যদর্শকের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। তথাপি উন্মুক্ত মঞ্চে মঞ্চায়িত নাটক এখনাে দর্শক সমাদৃত বলা যায়। প্রতিবছর সাগর দাড়ীতে উন্মুক্ত মঞ্চে নাটক মঞ্চায়ন ছাড়াও ২০১৫-১৬ বছরে ৫টি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। শিশু চিত্ত বিনােদন কেন্দ্রের সাথে যৌথ আয়ােজন রবীন্দ্র নজরুল জন্ম জয়ন্তীতে নজরুলের ‘তােষামদ’ ও ‘মানুষ’ নাটক মঞ্চায়িত করছে যা দর্শক নন্দিত হয়েছে। নাট্য চর্চা শিল্পী তােষন প্রশিক্ষণ ও নাটক উন্নয়নে প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও নাটক জনপ্রিয় করার কাজে যশাের ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। নাট্যকলা সংসদের ইতিহাস সমুন্নত রাখতে যশাের ইনস্টিটিউট সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত বিভাগীয় উপকমিটি সম্পাদকগণের কার্যকালের মেয়াদ সম্বলিত তালিকা নিচে সংযুক্ত করা হল।