JASHORE INSTITUTE-RIPON

যশোর ইনস্টিটিউট,যশোর

Jashore Institute, Jashore

বিজ্ঞপ্তি :-

যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি, ক্রীড়া বিভাগ, নাট্যকলা সংসদ, শিশু চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে সদস্য ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে।

একশত ছেষট্টি বছর অতিক্রান্তকারী এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ধারক যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি। এই ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রতিষ্ঠানটি শুধু যশাের নয় সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। ভারতীয় উপমহাদেশে পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরুর সূচনা লগ্নেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশাের পাবলিক লাইব্রেরি। সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, যশাের পাবলিক লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৫৪ সাল এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মিঃ আর সি রেক্সই স্বীকৃত, কারণ তিনিই ছিলেন সে সময়ের যশােরের জেলা কালেক্টর । কিন্তু লাইব্রেরি বিষয়ক পণ্ডিত ও গবেষক ড. মােফাখখার হােসেন খান দাবি করেন যে, যশাের পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাকাল আরাে পূর্বে ১৮৫১ সালে। কোলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইণ্ডিয়া এবং লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁর সে দাবির স্বপক্ষে তথ্য মিলেছে। রাজেন্দ্রলাল মিত্র সম্পাদিত বিবিধার্থ সংগ্রহে (কার্তিক ১৭৭৩ শকাব্দ, ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ) শ্রী বিষ্ণুশর্মা পণ্ডিত তিন পৃষ্ঠার এক নিবন্ধে গ্রাম্যগ্রন্থালয় ঃ গ্রন্থালােচনার ইতিকর্তব্যতা বিষয়ে হিতােপদেশকর্তা শ্রী বিষ্ণুশর্মা পণ্ডিত যশােরে একটি পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কথা লিখেছেন। বাংলাদেশে পাবলিক লাইব্রেরির ইতিহাসে যশাের পাবলিক লাইব্রেরির সর্বপ্রাচিন এবং এখন গ্রন্থ সংগ্রহ, সেবার মান। এবং কার্যক্রমের দিক থেকে সে সর্ববৃহৎ ও সর্বোত্তম। তবে এ সম্মান কেবলমাত্র বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরি হিসেবেই তার প্রাপ্য। প্রধানত নিজস্ব আয়ে পরিচালিত যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি জনগণকে নানামাত্রিক সেবা দিয়ে চলেছে। সকলের জন্য উন্মুক্ত পাঠকক্ষ তাে আছেই। আছে সদস্যদের জন্য ঘরে বসে গ্রন্থপাঠের সুযােগ, পত্রিকা পাঠের সুব্যবস্থা, রেফারেন্স বিভাগের সুবিধা। কিন্তু তার চেয়ে বড় যেটি আছে তা হল বই ব্যাংক শাখা। ব্যক্তির পরিবর্তে সদস্য গ্রন্থাগার এককালীন পুস্তক ধার করতে পারে তাদের পাঠাগারের জন্য। এটি একটি আধা স্বয়ংক্রিয় গ্রন্থ সঞ্চালন প্রক্রিয়া, বই পৌছে যায় হবু পাঠকের দোর গােড়ায়। বাংলাদেশে এ ধরণের সেবা যশােরেই সর্ব প্রথম চালু হয় সত্তরের দশকে। এ দেশে গণপাঠাগারে ডিইউ দশমিক বর্গীকরণের মাধমে গ্রন্থবিন্যাস এবং খােলা তাকের প্রবর্তক ও যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্ররি, সেটিও ষাট সত্তরের দশকে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে গণপাঠাগারের মধ্যে যশাের পাবলিক লাইব্রেরি সর্বপ্রথম ফটোকপিয়ার মেশিন চালু করে, ছাত্র, গবেষকদের সেবার নতুন সুযােগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। আর এ সবই সম্ভব করে তােলেন বাংলাদেশের গ্রন্থাগার আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ অধ্যাপক মােঃ শরীফ হােসেন। আর এখন তাে যশাের পাবলিক লাইব্রেরি ইউনেস্কো পাবলিক লাইব্রেরি নেটওয়ার্কের সদস্য (১৯৯৬) এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ২০০১ সালে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি বিশ্ব তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আছে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি বিশাল সংগ্রহ, পত্র-পত্রিকা আর্কাইভ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশেষ বিভাগ, “বাংলাদেশের হৃদয় হতে”, যশােরের ইতিহাস উপাত্ত নিয়ে সংগ্রহ মূলক বিভাগ যশােরের উৎস হতে বিভাগ বা যশাের কর্ণার। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সংগ্রহ নিয়ে ‘মধুসূদন কর্ণার’ নজরুল বিষয়ক সংগ্রহ নিয়ে নজরুল ইনস্টিটিউটের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ‘নজরুল কর্ণার।

ইতিহাসের অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী যশাের ইনস্টিউট পাবলিক লাইব্ররি। ১৮৬৪ সালে যশাের পৌরসভার লাইব্রেরি ভবনেই  প্রথমে যাত্রা শুরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি । পরবর্তীতে  যশাের মাইকেল মধুসূদন কলেজ ১৯৪৪ সালে যাত্ৰা শুরু করলে  উক্ত লাইব্রেরি  কর্যক্রম এ কলেজ থেকে পরিচালিত হয়  । দু-দুটো মহাযুদ্ধ, সাতচল্লিশের দেশ বিভাগ, আটচল্লিশের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ইতিহাসের এ সব বড় বড় ঘটনায় যশাের পাবলিক লাইব্রেরি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বার এ প্রতিষ্ঠানটির জায়গা বদল করতে হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটিশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি করেছিলাে যশাের ইনস্টিটিউটে, বাস্তুচ্যুত হয়েছিল পাবলিক লাইব্রেরি । এভাবে এর ভবন অনেক সম্পদ দলিলপত্র বিনষ্ট হয়েছে। হারিয়ে গেছে। ইতিহাসের অনেক মূল্যবান উপদান। আবার ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে যশাের যে গৌরবােজ্জ্বল ভূমিকা রাখে তার পিছনে এ প্রতিষ্ঠানের অবদান অপরিসীম। সেজন্য তাকে অপরিমেয় মূল্যও দিতে হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ব্যাপকতার মুখে এই প্রথমবার পুলিশ যশাের পাবলিক লাইব্রেরিতে হানা দিয়ে লাইব্রেরিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। অনেক মূল্যবান বই পুড়িয়ে দেয় এবং বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশি হামলার মুখে ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক এবং লাইব্রেরি সম্পাদকসহ অনেকেই দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। জেলা প্রশাসক বাতিল করে দেয় ইনস্টিটিউটের নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি। সে সময় যারা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা প্রায় সকলেই লাইব্রেরির সাথে কোনাে না কোনাে ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাই প্রশাসন লাইব্রেরির উপর এত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য কোনাে পাবলিক লাইব্রেরি সম্ভবত এভাবে রাষ্ট্রীয় কমলাপীড়নের নির্মম শিকার হয়নি। যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি মূলত পঞ্চাশ এর দশক থেকে তৎকালীন সরকারী পৃষ্ঠপােষকতার আওতায় আসতে থাকে। প্রাদেশিক রাজস্বব্যয়ে লাইব্রেরি উন্নয়ন যশাের পাবলিক লাইব্রেরির ইতিহাসে সেইই সর্বপ্রথম। এ পর্যায়ে উন্নয়নের ধারার প্রথম পর্যায়ে চললাে ১৯৫৯ খ্রিঃ পর্যন্ত। ১৯৬০ থেকে আধুনিকায়নের কাজ সরকারের ৩৫ নম্বর স্কীমের আওতায় লাইব্রেরি নিয়মিত মুঞ্জুরি পেতে থাকে। ১৯৬২/৬৩ সালে পুরাতন অবকাঠামাে অপসারণ করে তদস্থলে নতুন দ্বিতল ভবন গড়ে তুলে নতুনভাবে লাইব্রেরির কার্যক্রমের গতিকে ত্বরান্বিত করা হয়। সে সময় ভবন নির্মাণ তদারকির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

গঠিত কমিটি ঃ ১) এম. রওশন আলী সাধারণ সম্পাদক ২) কে এম মুজিবুর রহমান এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ওয়াপদা ৩) জহিরুল হক মজুমদার ৪) কাজী মকবুল হােসেন ৫) মসিউর রহমান সরদার ৬) গােলাম ইয়াদান চৌধুরী ৭) এম এ হালিম ৮) সতিশ কুমার দত্ত ৯) মাহমুদুর রহমান ১০) প্রফেসর সৈয়দ সিদ্দিক হােসেন এল এফ ১১) কাজী মােঃ ওবায়দুর রহমান ১২) সি এণ্ড বি এর সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়র সাহেব প্লান এবং এস্টিটমেন্ট প্রস্তুত করেন এবং কাজী মােঃ ওবায়দুর রহমান সাব কমিটির বিশেষ অনুরােধে তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

১৯৬৬ সালে শিশুদের জন্য স্বতন্ত্র বিভাগ শিশুদের নিজস্ব জগৎ তৈরিতে সহযােগিতা করেছিলাে। ১৯৬৮ সালে সরদার জয়েন উদ্দিন উদ্বোধন করেন চাদা মুক্ত ভ্রাম্যমাণ বিভাগ, যিনি ছিলেন তৎকালীন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক। এর আগে বই মেলার সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে, যশাের পাবলিক লাইব্ররিতে এবং পৌর এলাকার প্রত্যেক মাধ্যমিক স্কুলে একদিন করে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত বই মেলার আয়ােজন করা হয়। এ সময় সরদার জয়েন উদ্দীন সাহেব ১৯৬৮ সালে লাইব্রেরি কর্মীদের সাথে সক্রিয়ভাবে বই মেলায় অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পর নতুন রাষ্ট্রর জীবনে প্রথম বইমেলা সংগঠিত হয় যশাের পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে বই মেলার উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষা ও সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী অধ্যপক ইউসুফ আলী। এরপর ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২ থেকে ৬ জানুয়ারী ১৯৭৩ পর্যন্ত যশাের পাবলিক লাইব্রেরিতে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ পালিত হয়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও পাবলিক লাইব্রেরির উদ্দ্যোগে গ্রন্থউৎসব ও আন্তর্জাতিক বইমেলা উদযাপিত হয়। ২০ ডিসেম্বর ১৯৭২ বুধবার উৎসব উদ্বোধন হয় ভাতুড়িয়াতে, উদ্বোধন করেন জনাব আব্দুস সাত্তার। ২১ ডিসেম্বর ১৯৭২ বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হয় শেখহাটিতে উদ্বোধন করেন হােসেন আলী। ২২ ডিসেম্বর ১৯৭২ শুক্রবার উদ্বোধন হয় তালবাড়িয়ায়, উদ্বোধন করেনন গােলাম মােস্তফা। ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭২ শনিবার উদ্বোধন হয় হাশিমপুরে, উদ্বোধন করেন আব্দুর রফিক। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ মঙ্গলবার উদ্বোধন হয় হামিদপুরে, উদ্বোধন করেন রওশন আলী। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭২ বুধবার বারীনগরে উদ্বোধন করেন ফজলুল করিম । ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭২ বৃহস্পতিবার চুড়ামনকাঠিতে উদ্বোধন করেন মােঃ বাসেত উল্লাহ। ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭২ শুক্রবার রামনগর উদ্বোধন করেন আজীজুল হক। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭২ শনিবার রূপদিয়াতে উদ্বোধন করেন আবদার রশীদ।

০১ জানুয়ারি ১৯৭৩ সােমবার জঙ্গল বাধাল উদ্বোধন করেন ফজলুল করিম চৌধুরী। ২ ও ৩ জানুয়ারি ১৯৭৩ মঙ্গলবার-বুধবার উদ্বোধন করেন যশাের শহর ড. মুহম্মদ এনামুল হক। ৪ জানুয়ারি ১৯৭৩ বৃহস্পতিবার কালিগঞ্জ উদ্বোধন করেন ড. গ্লাতুক দানিয়েল চুক। ৫ জানুয়ারি ১৯৭৩ শুক্রবার ঝিকরগাছায় উদ্বোধন করেন সরদার জয়েন উদ্দিন। ৬ জানুয়ারি ১৯৭৩ শনিবার নাভারণ উদ্বোধন করেন সৈয়দ মুজিবুল হক। এই কর্মযােগ্যে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন কাজী আব্দুর রউফ, ফজলুল বারী এবং মােহাম্মদ মসিউল আযম। আর মূল উৎসাহদাতা ছিলেন অধ্যাপক মােঃ শরীফ হােসেন। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ২৮ জানুয়ারি ১৯৭৬ এক চিঠি অনুসারে যশাের পাবলিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপি মাইক্রো ফ্লিম করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে স্বল্পকালীন ধার হিসেবে প্রেরণ করা হয়। ৩১ জানুয়ারি ১৯৭৭ প্রস্তাবিত বই ব্যাংক ভবনের (চার তলা বিশিষ্ট) প্রাক্কলন ব্যয় নকশা অনুযায়ী ১৮,৭৭৬ বর্গফুট ভবনের জন্য টাকা ২৩,৯৩,৬৩৩/- নির্ধারিত হয়। এবং প্রথম তলার জন্য ৫,৩০,৪৩৮/- টাকা গ্রহীত হয়। এই প্রকল্পের প্রথম স্বাপ্নিক রূপরেখা প্রণেতা ও উৎসাহদাতা ছিলেন যশাের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শহিদ অধ্যক্ষ মরহুম সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। যিনি ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল পাকিস্থান হানাদার বাহিনীর হাতে কলেজ ভবনেই নিহত হন। ভবনের নক্সা ও অন্যান্য কাজের চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রস্তুত সহ বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রখ্যাত স্থপতি জনাব মাজহারুল ইসলাম ও বিশিষ্ট প্রকৌশলী জনাব শহীদুল্লাহ ও সহকর্মীগণের অবদান লাইব্রেরির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 

প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন সময়ে লাইব্রেরি সম্পাদকের দায়িত্ব পালনরত উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক জনাব অধ্যাপক মােঃ শরিফ হােসেন সরকারি অনুদান গ্রহণের ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। ৪ এপ্রিল ১৯৭৭ বইব্যাংক ভবনের শিল্যা বিন্যাসের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জনাব এ জেড এম নাসিরুদ্দিন সাহেবের নাম প্রস্তাব গৃহীত হয়। ভবনটির স্থাপনে আন্তরিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন বিভাগীয় কমিশনার জনাব এ জেড এম নাসিরুদ্দিন, যশােরের তদানীন্তন জেলা প্রশাসক জনাব মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবং খুলনা বিভাগীয় উন্নয়ন বাের্ডের সচিব ও সদস্যবৃন্দ। এ সময়ে ভবন নির্মাণ বিষয়ক একটি বিশেষ কমিটি গঠিত হয়। জনাব আব্দুল হাসিব ও জনাব মশিউর রহমান সরদার ছিলেন যুগ্ম আহবায়ক। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইমারত বিভাগ যশাের সভাপতি। নির্বাহী প্রকৌশলী ইমারত বিভাগ যশাের সদস্য। অধ্যক্ষ যশাের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট যশাের সদস্য। জেলা প্রকৌশলী যশাের জেলা বাের্ড সদস্য। সহকারী প্রকৌশলী যশাের শিক্ষা পরিদপ্তর যশাের সদস্য। জনাব আলমগীর সিদ্দিকী, জনাব মােঃ শরীফ হােসেন, জনাব তরিকুল ইসলাম, জনাব আব্দুল হালিম খান, ডা. আজিজুল ইসলাম, জনাব শেখ রবিউল আলম, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, জীবন সদস্য, সৈয়দ মােশারফ আলী, জনাব শামসুদ্দিন তরফদার, জনাব মাহবুবুর রহমান খােকন, জনাব মমতাজ উদ্দিন মিয়া, এম এ ই, জনাব লুইস টামাস বিশ্বাস তাছাড়াও ১০ দসস্যের তত্ত্বাবধায়ক উপসংস্কার কমিটি গঠিত হয়। জনাব আব্দুল হালিম ও জনাব মশিউর রহমান সরদার যুগ্ম আহবায়ক। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সদর যশাের সদস্য। সৈয়দ মাহমুদ আলী কাচা, আব্দুল জলিল খান। অধ্যাপক মাে. শরীফ হােসেন, আলমগীর সিদ্দিকী, তরিকুল ইসলাম, খালেদুর রহমান টিটো এবং ডাঃ আজিজুল ইসলাম। ১৭ এপ্রিল ১৯৭৭ বইব্যাংক ভবনের শিলাবিন্যাস করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জনাব এ. জেড. এম নাসিরুদ্দিন। এ প্রকল্প গ্রহণে যারা সার্বিক ও সর্বাত্মক সহযােগিতা করেন তারা। হলেন যশাের ইনস্টিটিউটের ভূতপূর্ব সভাপতি এ জেড এম নাসিরুদ্দিন। সভাপতি মহিউদ্দিন খান আলমগীর খুলনা বিভাগীয় উন্নয়ন বাের্ডের তকালীন সচিব। আনােয়ারুজ্জামান চৌধুরী। পরিকল্পনা বিষয়ক সদস্য এম ইয়াকুব খান অর্থ বিষয়ক সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন এবং বাের্ডের সদস্যবৃন্দ। ভবনটির পরিকল্পনা ও নক্সা প্রণয়ন করেন এবং প্রকৌশল ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সহয়তা করেন ঢাকার শহীদুল্লাহ এণ্ড এ্যাসােসিয়েটস্ বিশেষজ্ঞ শেখ মুহম্মদ শহীদল্লাহ রবিউল হুসাইন ও মাহমুদ হুসাইন।

১১ মে ১৯৭৭ যশাের জনশিক্ষা পরিদপ্তরের এক চিঠিতে যশাের পাবলিক লাইব্রেরিকে গ্রামাঞ্চলে পাঠাগার সংগঠনের সারথী প্রকল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত করে। গ্রামাঞ্চলে গ্রন্থাগার সম্প্রসারণ বিষয়ক যৌথ সারথি প্রকল্পে পাবলিক লাইব্রেরি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাথে একটি চুক্তির ফলে প্রথমবারের মত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র যশাের পাবলিক লাইব্ররিকে ২০০ খানা বই প্রদান করে। ১৯৭৭ সালে মরহুম কবিরাজ মােহাম্মদ বাঘু বিশ্বাসের স্বহস্ব লিখিত কয়েকখানি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি কবিরাজ পুত্র জনাব মােহাম্মদ মনসুর লাইব্রেরিতে দান করেন। একই বছর জনাব মুকিতুল ইসলাম দান করেন অনেকগুলি প্রাচীন দলিল। অধ্যাপক মােঃ মসিউল আযম সাহেব কর্তৃক সংগৃহীত পাণ্ডুলিপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারকে ধার হিসেবে প্রদান করা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার সেগুলাে মাইক্রো ফিল্ম প্রস্তুত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতীয় কল্যাণকর কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে।

অনেকের ধারণা ১৯২৮ সালে যশাের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ফলে অন্য বিভাগগুলাে নাম পরিবর্তন হয়ে একিভূত হয়ে যায় কিন্তু বাস্তব ইতিহাস অন্য। ১৪ অক্টোবর ১৯৭৯ বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত কিছু সংশােধনী থেকে জানা যায় জনাব এম এ মান্নান প্রস্তাবিত এবং জনাব এস এম আলী কাচা কর্তৃক সমর্থিত যশাের নাট্যকলা। সংসদ এর পরিবর্তে যশাের ইনস্টিটিউট ‘নাট্যকলা সংসদ’ সংশােধিত প্রস্তাব জনাব গােলাম ইয়াজদান চৌধুরীর সমর্থন ক্রমে বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। মিঃ হরেন্দ্র কুমার দাস কর্তৃক প্রস্তাবকৃত এবং জনাব গােলাম ইয়াজদান চৌধুরী সমর্থিত যশাের ইনস্টিটিউটের-সংবিধানের ৪৯ নম্বর পাতার দ্বিতীয় লাইনে Library Section as “The Jessore public library” নামটির পরিবর্তন করে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি নামকরণের প্রস্তাব হলে, প্রস্তাবটি সর্বসম্মতি ক্রমে বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত হয়। ১৯৭৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর লাইব্রেরির এক, গত পঁচিশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষে সদ্যনির্মিত বইব্যাংক ভবনের নীচতলায় তৎকালীন সময়ের সর্ববৃহৎ শিশু কিশাের গ্রন্থাগারের উন্মচন করেন যুগ্মভাবে তৎকালীন সময়ের এ প্রকল্পের পরিকল্পক স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ অধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিন অহম্মেদের একমাত্র কিশাের পুত্র সালাহ উদ্দিন আহম্মদ সুলতান ও জেলা প্রথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ শিক্ষক মােহাম্মদ আযহার উদ্দিন। অন্যান্য অতিথির মধ্যে সালাউদ্দিন আহম্মেদের মাতা বেগম সামসুন্নাহার আহম্মেদ বইব্যাংক ভবনের স্বেচ্ছাসেবী স্থপতি জনাব রবিউল হুসাইন ও প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ১৯৮৪ সালে সাব্বির শিশুকিশাের ফাউণ্ডেশন ট্রাস্ট যশাের পাবলিক লাইব্রেরিকে তাদের নির্ধারিত পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করে এবং দশ হাজার টাকা প্রদান করে। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিল্লুর রহমান। সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কবি বেগম সুফিয়া কামাল লাইব্রেরির সম্পাদক জনাব মাে. শরীফ হােসেনের নিকট কিছু নির্বাচিত গ্রন্থ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। বাকী বই সাব্বির ফাউন্ডেশন সরাসরি লাইব্রেরিতে প্রেরণ করে। ১৯৮৫সালের ডিসেম্বর পঞ্চদশ বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের হৃদয় হতে নামাঙ্কিত একটি স্বতন্ত্র বিভাগের উদ্বোধন হয়। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন সংগ্রহ নিয়ে বিভাগটি গঠিত বিশেষভাবে জনাব মােহাম্মদ সফি তার বহু দুঃসাহসিক আলােক চিত্র এবং যশাের সদর উপজেলা পরিষদ দুই সেট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস দলিলপত্র প্রতিটি ১৫ খণ্ড উপহার দিয়ে বিভাগটিকে সমৃদ্ধ করে।

 

১৯৮৫সনের ২১-২৩ আগস্ট তিনদিন গ্রামীণ গ্রন্থাগারিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়ােজন করা হয়। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও যশাের ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়ােজিত প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন গ্রন্থাগারিক ও বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবী। তাঁরা প্রশিক্ষক ও বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে আয়ােজনটিকে সমৃদ্ধ করেন। ১৯৮৫ সালে কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথিকে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানাে হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি শুভেচ্ছা প্রতিনিধিদল ও দলনেতা ওয়ান কুয়াে দুয়ান সহ সফর সঙ্গীদের ৮ মার্চ ৮৫ তে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর ৮৫ তে কবি বেগম সুফিয়া কামাল এবং ঢাকাস্থ এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রােগ্রাম ডাইরেক্টর মিসেস নার্গিস জাফরকে আন্তরিক সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ড. কবীর চৌধুরী এবং কোলকাতার পরিবর্তন সম্পাদক ড. পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় পাঠাগার পরিদর্শন করে মুগ্ধ হন। ১৯৮৬ সনে পত্র পত্রিকা সাময়িকী সংরক্ষণ ও উপহার বিভাগ চালু করা হয়। ১৯৮৭ সনের ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি জাতীয় গ্রন্থমেলা ৮৭ তে অংশগ্রহণ ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনীর জন্য পাবলিক লাইব্রেরি আমন্ত্রিত হয়। তদানিন্তন লাইব্রেরির সম্পাদক জনাব আমিরুল আলম খান লাইব্রেরিয়ান কাজা লুৎফুন্নেস। এবং সহকারী গ্রন্থাগারিক মাে. আবু জাহিদ উক্ত প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। আঞ্চলিক কেন্দ্রীয় বইব্যাংকের ভ্রাম্যমাণ শাখা লাইব্রেরির কর্মীসম্মেলন ১৭ জুলাই ১৯৮৭ তে অনুষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রমধর্মী এ সম্মেলনে লাইব্রেরির কর্মী ও কর্মকর্তাদের সাথে ভ্রাম্যমাণ শাখা কর্মীদের উন্মুক্ত আলােচনা হয়। গ্রামীণ ক্ষুদ্র পাঠাগার কর্মীদের উদ্ভুত সমস্যার ওপর বাস্তব অভিজ্ঞতা লব্ধ দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মাে. শরীফ হােসেন। স্বাধীনতার ২০ বছর পূর্তি ও যশাের মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৭ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে যশাের ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১০ দিনব্যাপি বিজয় উৎসব এর আয়ােজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন সমাজ কল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ রাজনীতিক ও যশাের-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মরহুম জনাব এ্যাডভােকেট রওশন আলী।

বাংলা ১৩০০ সনের বিদায় এবং ১৪০০ সনকে স্বাগত জানিয়ে ৩০ চৈত্র থেকে ১৪ বৈশাখ পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী শতাব্দী বরণ উৎসব পালিত হয়। ২৮ আগস্ট থেকে ০৬ সেপ্টেম্বর ৯১ পর্যন্ত এ যাবৎ কালের সর্ববৃহৎ বইমেলার আয়ােজন করে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি ও বাংলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যৌথভাবে। দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ঔপন্যাসিক, কবি, শিল্পীদের উপস্থিতিতে আলােচনাসভা, বিভিন্ন প্রতিযােগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়।

জেলা প্রশাসক জনাব ভূঁইয়া রফিউদ্দিন আহমেদ মেলার উদ্বোধন করেন। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রর তৎকালীন পরিচালক জনাব ফজলে রাব্বি, চিত্তরঞ্জন সাহা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক জনাব শওকত আলী, অধ্যাপক মিহির মল্লিক জামান, ওয়াহিদুর রহমান, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. আব্দুল্লাহ-আল মুতি সরফুদ্দীন, পান্না কায়সার, কলামিস্ট ও কবি তসলিমা নাসরিন, ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন, কবি আজীজুল হক, কবি ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহম্মেদ, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক। বইমেলা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক জনাব মােঃ ইয়াকুব এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন ঢাকার বিদ্যা প্রকাশ এর জনাব মজিবর রহমান খােকা। ১ নভেম্বর ১৯৯২ থেকে ১০ নভেম্বর ১৯৯২ পর্যন্ত ১০ দিনের বইমেলা সম্পূর্ণভাবে যশাের ইনস্টিটিউটের নিজস্ব উদ্যোগে আয়ােজিত হয়। দেশের খ্যতনামা শিক্ষাবিদ, ঔপন্যাসিক, কবি শিল্পীদের উপস্থিতিতে। উল্লেখযােগ্য যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. গােলাম রহমান, অধ্যাপক মােঃ শরীফ হােসেন, সাখাওয়াত হােসেন, পরিচালক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ঢাকা, পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষে মজিবর রহমান খােকা। নাট্য ব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন, লেখিকা সেলিনা হােসেন, বিশিষ্ট চিন্তাবিদ নুরুল হুদা মির্জা, কবি নির্মলেন্দু গুণ, বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন, মােবারক হােসেন খান, মহাপরিচালক শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসক ভূইয়া রফিউদ্দিন আহমেদ এবং যশাের ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মােঃ ইয়াকুব।

একই বছর ১৯৯২ সালে জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের সহযােগিতায় বইব্যাংক ভবনের। তৃতীয় তলার পশ্চিমাংশের কাজ শেষ হয়। ১ নভেম্বর ১৯৯৩ থেকে ১০ দিনব্যপী আঞ্চলিক বইমেলা জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দ্বারা আয়ােজিত এবং যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরির সহযােগিতায় উদযাপিত হয় । বইমেলায় প্রধান অতিথি হিসাবে ডাক ও টেলিযােগাযােগ মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা থেকে জাতীয় ভিত্তিক ২২টি প্রকাশনা সংস্থা উক্ত মেলায় অংশ গ্রহণ করে। ১ থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৯৫ সাত দিনব্যপী জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সহযােগিতায় বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ চৈত্র থেকে ৯ বৈশাখ ১৪০৪ সালে ১০ দিনব্যপী বৈশাখি মেলা উদযাপিত হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৯৭ থেকে ৭ জানুয়ারি সাত দিনব্যাপী জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সহযােগিতায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর সম্মতিতে পরিবার কর্তৃক তাঁর সংগ্রহশালার বই সমূহ লাইব্রেরিতে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম কিস্তির ১০০০ এক হাজার বই উপহার হিসেবে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রদান করা হলে ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান সাহিত্য সংগ্রহ ও গবেষণাকক্ষ নিয়ে অধ্যাপক শরীফ হােসেন গবেষণা হল প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর সমস্ত সংগ্রহ নিয়ে ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্ণার নামে চিহ্নিত করা হয়। ৭ মে ২০০১ বইব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলায় নির্মাণের জন্য উন্নয়ন কমিটি গঠিত হয়, সে কমিটিতে যারা ছিলেন: জনাব সুলতান আহমেদ আহবায়ক, জনাব রফিকুর রহমান। তােতন সদস্য এবং জনাব শহীদ আনােয়ার সদস্য। এই কমিটি বইব্যাংক ভবনের পূর্বাংশের কাজকে ত্বরান্বিত করেন।

এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও প্রধান বিচারপতি যশােরের কৃতি সন্তান জনাব লতিফুর রহমান বইব্যাংক ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্তিকল্পে ২ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। তাছাড়া তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম বই ক্রয়ের জন্য ২০০৩ সালে ৮০ (আশি) হাজার টাকা প্রদান করেন। ২০০৫ সালে ২১ নভেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম এবং আমেরিকান দূতাবাসের চার্চদা এ্যাপিয়ারস জুডিস চামাস বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকান কর্ণার উদ্বোধন করেন। যা যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি ও আমেরিকান এ্যামবেসি উভয় পক্ষের সম্মতিতে ৬ জুন ২০১৩ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলােপ সাধিত হয়। ইতিপূর্বে পরিকল্পিত চার তলা বইব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলার অর্ধাংশের নির্মাণ কাজ সমাপ্তির জন্য ১৯৮৭ সালে তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হােসেন মােহাম্মদ এরশাদ পাঁচ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমদানি শুল্ক মওকুপ করে বিদেশ থেকে সরাসরি ফটোকপিয়ার (জেরক্স) মেশিন কেনার জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করেন। ১৯৭০-৮০ এর দশকে খুলনা বিভাগীয় উন্নয়ন বাের্ডের সহায়তায় যে রাষ্ট্রীয় সহায়তা যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি পেয়েছিল এত ব্যাপক সহায়তা আর কোনাে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে পায়নি। কিন্তু খুলনা বিভাগীয় উন্নয়ন বাের্ড বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে যশাের পাবলিক লাইব্রেরির উন্নয়ন কাজ অনেকাংশে থেমে যায়।

বিভিন্ন বিশিষ্ট বদান্য ব্যক্তির ব্যক্তিগত সংগ্রহ এখানে সমর্পিত এবং সংরক্ষিত। অধ্যাপক মােহাম্মদ শরীফ হােসেন সংগ্রহ, ডা. মারুফ হােসেন সংগ্রহ, ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্ণার নামে বিশেষ সংগ্রহ, কবি লাল মােহাম্মদ সংগ্রহ, ইঞ্জিনিয়ার কাওসার আলী সংগ্রহ, সুধীর কুমার সাহা সংগ্রহ, কবি আজীজুল হক সংগ্রহ, অধ্যক্ষ সাহাদত আলী আনসারী সংগ্রহ, কমরেড আব্দুল মতিন মুনির সংগ্রহ এবং রামকৃষ্ণ আশ্রম এর সংগ্রহ যশাের পাবলিক লাইব্রেরির জন্য বিশেষ গৌরব। এসকল বিদগ্ধ ব্যক্তি ছাড়াও যশাের এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কবি লেখক দানশীল ব্যক্তি তাদের রচিত বইসমূহ যশাের পাবলিক লাইব্রেরিকে দান করেছেন। যশাের ইনস্টিটিউটের বইব্যাংক ভবনের তিন তলার পূর্বাংশের সমগ্র কক্ষটির সংগ্রহ নিয়ে অধ্যাপক শরীফ হােসেন গবেষণা কক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১১/৯/০৮ সালের এক সিদ্ধান্তে প্ৰক্ষাত কবি ও গীতিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রফেসর ও বাংলা বিভাগীয় প্রধান যশােরের কৃতি সন্তান মরহুম ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর সমগ্র সংগ্রহ নিয়ে মনিরুজ্জামান কর্ণার ওই কক্ষে স্থাপন করা হয়।

১৯৭২ সালে ১১ হাজার বইয়ের সংগ্রহ বর্তমানে ৯০ হাজারে উপনীত হয়েছে। যশােরের স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের রচিত বই নিয়ে ২৫, ২৬, ২৭ জুন ২০০৯ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। তিনজন স্বনামখ্যাত ব্যক্তি যেমন, কবি চিন্তাবিদ আবুল। হুসেন, কবি আজীজুল হক, এবং কবি ও গীতিকার ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হিমেল উৎসর্গ করা হয়। প্রয়াত প্রাক্তন লাইব্রেরি সম্পাক অধ্যাপক মােহাম্মদ শরীফ হােসেন স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের সিদ্ধান্ত ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ গৃহীত হয় এবং পরবর্তিতে প্রকাশিত হয়। ১৩ এপ্রিল ২০১০ রওশন আলী মঞ্চের উদ্বোধন হয় লাইব্রেরি চত্বরে একই সঙ্গে ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ উদীচীর অনুষ্ঠানে বােমা বিস্ফোরনে নিহত ১০ জন শহিদ স্মরণে স্মারক স্মৃতির উদ্ভোধন হয়। ১৯১০ এর ১০ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলাতে সর্বমােট ৬৮ টি স্টল অংশগ্রহণ করে। ঢাকা এবং স্থানীয় লাইব্রেরি ও প্রকাশকগণ অংশগ্রহণ করেন। ঢাকার জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির ৫০ জন প্রকাশক ও বই বিক্রেতা মেলাতে অংশ নেন।

লাইব্রেরি বিভাগ পরিচালিত একটি বিশেষ বিভাগ শানিবাসরীয় সাহিত্য আসর এক সময় রবিবাসরীয় সাহিত্য আসর নামে পরিচিত ছিল। কবি গােলাম মােস্তফা, ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান, স্থানীয়ভাবে মমতাজ উদ্দিন, আনােয়ারুল ইসলাম, সুফিয়া বেগম এর মত কবি, সাহিত্যিক ও গীতিকারগণ এই চত্বরকে মুখরিত রাখতেন। বর্তমান শনিবাসর, নবীন-প্রবীণ, কবি সাহিত্যিকদের সমাবেশে প্রতি শনিবার মুখর থাকে। বিভাগপূর্ব পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রবিবাসরীয় সাহিত্য আসরে অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হতেন। যেমন মনােজ বসু, দক্ষিণারঞ্জন বসু, তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী, সরদার জয়েন উদ্দিন, মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. গ্লাতুক দানিয়েল চুক সহ আরও অনেক তরুণ প্রজন্মের কবি, কবি রেজাউদ্দিন। স্টালিন, দারা মাহমুদ, কবীর হােসেন তাপস, আব্দুর রব, ফখরে আলম প্রমুখ। মূলত তাদের কবি সত্তার উন্মেষ এখান থেকেই। প্রতিবছর লাইব্রেরি বিভাগ মনােনীত একটি কমিটি সাহিত্য আসরটি কে সূচারুরূপে পরিচালিত করেন।

২০১৭ সালের জন্য কবি কাসেদুজ্জামান সেলিম ও এ্যাডভােকেট শাহারিয়ার বাবুকে উপদেষ্টা করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট শনিবাসরীয় সাহিত্য আসর পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। বিংশ শতকের শেষ এবং একবিংশ শতকের দ্বার প্রান্তে উপণীত হয়ে আমাদের সার্বিক অবস্থিতি আজ কোথায়? এ প্রশ্ন সচেতন প্রতিটি মানুষের মনে। জ্ঞান। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে আমরা কোথায়? আর বিশ্ব কোথায় সারাদিন মুখস্ত বিদ্যা আর কোচিং এর যাঁতাকলে পিষ্ট শিক্ষার্থীরা মৌলিক চিন্তা করার সুযােগ পায় না।

যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি নিজস্ব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও পাঠকসেবার বিকাশ, শিশু-কিশাের, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক, সর্বোপরি সাধারণ পাঠকের জন্য জ্ঞানঅন্বেষণের দ্বার উন্মুক্ত রেখে অবারিত আহবানের প্রক্রিয়াকে বেগবান। করার শত প্রয়াস অব্যহত রেখে চলেছে। শতব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য অহংকার আর সভ্যতার প্রতীক গণগ্রন্থাগারটির অতীত গৌরবের ইতিহাস আজ হুমকির সম্মুখিন বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু সমস্যার উত্তরণের ক্ষেত্রে সংকীর্ণ মানসিকতা কাটিয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ক’জন এগিয়ে আসেন? যশােরের মতাে ঐতিহ্যবাহী জেলায় বিত্তবান মানুষেরতাে অভাব নেই। মসজিদ মাদরাসা এতিমখানা উন্নয়নে অনেকে উদার, কিন্তু লাইব্রেরি উন্নয়নে ক’জন আন্তরিক? তবুও শত প্রতিকুলতার নাগ পাশ ছিন্ন করে কিছু উদারচেতা ও মুক্ত চিন্তার মানুষ এখনাে জ্ঞান বিজ্ঞান তথা শিক্ষ বিস্তারের সহযােগী হতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী। তেমনি একজন মানুষ যিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিউক্যালস এর সত্বাধিকারী এবং জাহেদী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর তাঁরই উৎসাহে বন্ধু রাষ্ট্র তুরস্কের তদানিন্তন রাষ্ট্রদূত জনাব এস ভকর ইরকুল লাইব্রেরি পরিদর্শনে আসেন। জনাব জাহেদী লাইব্রেরির সম্মুখ অবস্থা অবহিত হয়ে লাইব্রেরি উন্নয়নে এবং লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আধুনিকায়ন, বিশেষায়িত সফটওয়ার সমৃদ্ধ কম্পিউটার ব্যবহার সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রশিক্ষণের ইচ্ছা পােষণ করেন।

যশাের ইনস্টিউট পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ এমন একটি ভালাে প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট উপকমিটি গঠন করে। গঠিত কমিটি আহ্বায়ক ছিলেন জনাব মােকসিমুল বারী অপু, সদস্য সচিব মােস্তাফিজুর রহমান কাবুল সদস্য ছিলেন শ্রাবস্তী আহম্মদ, এম এ মতিন সিদ্দিকী, এ্যাড মাহমুদ হাসান বুলু ও রওশন আরা রাসু। অপর দিকে রেডিয়েন্ট ফার্মার পক্ষে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন জনাব ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ। সকলের সম্বনিত, প্রচেষ্টায় যশাের ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইট এবং যশাের ইনস্টিটিউট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে। এর মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠাটি তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব সড়কে অনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত হল। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিটিউক্যালসের চেয়ারম্যান ও জাহেদী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর অকৃপণ অর্থায়নেই পাবলিক লাইব্রেরি ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম বাস্তব রূপ পেয়েছে। বইব্যাংকের শরীফ হােসেন হলে জাঁকজমকপূর্ণ আয়ােজনের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি প্রজাতন্ত্রী তুরস্কের রাষ্টদূত জনাব হুসেইন মুফতুঘলু বিশেষ অতিথি ছিলেন যশাের শিক্ষাবাের্ডর চেয়ারম্যান প্রফেসর আমিরুল আলম খান ও জাহেদী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জনাব নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন লাইব্রেরি বিভাগীয় সম্পাদক মােস্তাফিজুর রহমান কাবুল।

যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পর গােটা ব্যবস্থাপনাই পর্যায়ক্রমে ডিজিটালাইজড হবে। দাপ্তরিক কাজকর্ম ইতিমধ্যে অনেকটাই কম্পিউটারাইজড করা সম্ভব হয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিজিটাল হওয়াতে পুরানাে বই ক্যাটালগিং কাজ সমাপ্তির পথে। কিন্তু এর মাঝে চলমান কার্যক্রম এগিয়ে নিতেও কর্মীদের সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে পুরানাে বই এর কাজ শেষ করতে কখনাে কখনাে বাধার সৃষ্ঠি হয়। ইন্টারনেট সংযােগ কার্যকর রয়েছে। গ্লোবাল কর্ণার চালু হলে ছাত্র ছাত্রী গবেষকবৃন্দ ব্রাউজিং করার সুযােগ পাবে। বইব্যাংক ভবন ইতােমধ্যে ব্রড ব্যান্ডের আওতায় চলে এসেছে। এর পর গােটা লাইব্রেরি চতুরই হবে ফ্রি ওয়াইফাই জোন। লাইব্রেরিতে ই-বুক কর্যক্রম ইতােমধ্যে স্বল্পমাত্রায় শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের চলতি কার্যক্রম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। ইনস্টিটিউটের ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করা হয়েছে সেখানে। এটি অব্যাহতভাবে চলবে। ২০১২,১৩,১৪ সালের মতাে ২০১৬ সালেও বইপাঠ কবিতা আবৃত্তি প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠান হয়েছে। বিগত সময়ের মত বর্তমানেও পাঠকের চাহিদা মােতাবেক বই যােগান প্রক্রিয়া অব্যহত রয়েছে।

ফলে বর্তমানে পাঠক সংখ্যা উল্লেখযােগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু কিশাের পাঠক উদ্বুদ্ধকরণে শহর এলাকার স্কুলসমূহ পরিদর্শন করে চাঁদা মুক্ত শিশু কিশাের সদস্য। বৃদ্ধি ব্যাপারে কাজ চলছে।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে দেশবরেণ্য কবি গীতিকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান এর অষ্টম। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়ােজন ছিলাে অন্যতম। বর্তমান লাইব্রেরি পরিচালনা উপকমিটির মেয়াদকাল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বর্তমান লাইব্রেরি সম্পাদক এস নিয়াজ মােহাম্মদ তার দায়িত্বকাল অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করতে সচেষ্ট আছেন। ডিজিটাল কার্যক্রম নিজে উপস্থিত থেকে সব সময় পর্যালােচনা করেন। শনিবাসরীয় সাহিত্য আসরের কর্মীদের উজ্জীত করতে নিয়মিত তাঁদেরকে সঙ্গ দেয়া ও মতবিনিময় করে থাকেন। আসরের মূখপত্র নৈকট্য তাঁর পৃষ্ঠপােষকতায় প্রকাশিত হয়েছে এবং আগামীতে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ হতে যাচ্ছে। নিয়ে তদারকি করে পাঠকের চাহিদা নিরুপণ করে বইপত্র যােগান দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন ইতিমধ্যে রেফারেন্স বিভাগে পাঠক বৃদ্ধিতে সফলতা অর্জিত হয়েছে।

নতুন দিগন্তে পা রেখে যশাের ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি আপন মহিমায় সম্মুখে এগিয়ে চলেছে। যশাের তথা আপামর বইপ্রেমী লাইব্রেরি প্রেমী মানুষের শুভ কামনায় সিক্ত হয়ে বর্তমান সময়ের একজনের বােপিত বীজ আগামীদিনের অন্য একজন বারীধারা সিঞ্চন করে ও অঙ্কুরিত করার ব্যবস্থা করে যাবে। তারপর অন্য একজন তাতে পুষ্প পল্লবে বিকশিত করে চলমান ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবে। এইতাে প্রকৃতির অনিবার্য নিয়ম। শত শত বছর আগের এই ঋদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি কালের বিবর্তনে সমাজ এবং সমাজ হিতৈষী বইপ্রেমী মানুষের হাত ধরে বর্তমান সময়কে অতিক্রম করে আগামীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত প্রতিষ্ঠানটি আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ইতিহাসের উপাদান রােপিত করে যাবে এটাই মানুষের প্রত্যাশা।

বিগত শত বছরের ইতিহাসের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, যারা এই মহতি প্রতিষ্ঠান চালনা করেছেন তাঁদের কার্যকালের মেয়াদকাল এবং নামের সাল ওয়ারী তালিকা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এই নিবন্ধের শেষে সংযুক্ত করা হল।